যদি আজ আপনি টাকা কে সেভ করে রাখেন বা বাচিয়ে রাখেন একদিন সেই টাকাই আপনাকে সেভ করবে। হ্যা টাকাই সবকিছু নয়, কিন্ত এই টাকাই সবকিছুই আপনাকে হাতের মুঠোয় এনে দেয়। আপনার ছোট থেকে বড় সব সপ্ন ই পুরন করে দেয় টাকা।
আপনি হয়তো সল্প মাইনের কাজ করেন কিন্তু মনে মনে ধনী হওয়ার সপ্ন নিশ্চই দেখেন। আপনি হয়তো ভাবেন আপনি আরো কাজ করবেন, আরো ইনকাম করবেন আর ধনী হবেন। কিন্তু এটা হয়তো আপনার ভুল ধারনা, প্রথমত আপনি যতদিন কাজ করবেন ততদিন ইনকাম করবেন।
তারপর, তাহলে কী মরে যাওয়ার আগে পজন্ত ইনকাম করবেন, বেচে থাকার জন্য। কোন কারনে পরিবারে কোন ইমারজেন্সি চলে আসল ফিক্সড ডিপোজিট এর ২০,০০০ টাকাও খরকুটের মত মনে হবে। তাই সময় থাকতে টাকা কে দিয়ে কাজ করাতে থাকুন।
যেটা জুগ জুগ ধরে বড় বড় বিজনেসম্যান এবং ইনভেস্টর রা করে আসছেন।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায় কোম্পাউন্ডিং ও চক্রবৃদ্ধি হলো পৃথিবীর অষ্টম আস্টায্য। যদি আপনি এই কোম্পাউন্ডিং এর পাওয়ার কে বুঝে নিতে পারেন তবে আপনি এটাকে কাজে লাগিয়ে টাকাকে কয়েকগুন মাল্টি প্লাই করতে পারবেন। অথাৎ বাড়াতে পারবেন।
এই কোম্পাউন্ডিং এর পাওয়ার কে বোঝাতে একটি গল্প বলি চলুন।
[caption id="attachment_1241" align="aligncenter" width="300"]

একজন সন্ন্যাসী রাজার কাছে ভিক্ষার জন্য গেলেন, এবং তার জন্য একবেলা খাবারের জন্য দাবি জানালেন। তখন রাজা অবাক হয়ে সেই সন্ন্যাসী কে বললেন, আমি রাজা আমি চাইলে সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে পারি। আপনি একটু বেশি কিছু চান এতো সামান্য দান আমি কাউকে দেই না।
রাজা তখন দাবা খেলছিলেন, সন্ন্যাসী তখন রাজাকে বললেন। ঠিকআছে তাহলে আপনার দাবার প্রথম ছকে একটি চাল রাখুন। পরের ছকে দুটি, তার পরের ছকে চারটি এমন করে ডাবল করতে করতে শেশ ছকে। অথাৎ ৬৪ নম্বর ছকে যতগুলি চাল হবে আমাকে সেগুলিই দিবেন।
রাজা অনাআসেই তার প্রস্তাব মেনে নিল। এবং দাবার ছকে সেইভাবে চাউল রাখা শুরু করলেন, এইভাবে ১,২,৪,৮,১৬ করতে করতে যখন ৩২ নাম্বার ছকে পৌছালো তখন সেটা সংখ্যা দাড়ালো ২১৪ কোটি ৭৪ লক্ষ্য ৮৩ হাজার ৬৪৮ তাহলে ৬৪ নম্বর ছকে পৌছালে সেটা কত হবে নিজেই বুঝে নিন।
তাই সবশেষে রাজা তার কথা না রাখতে পেরে তার রাজ্য ঐ সন্ন্যাসী কে দিয়ে দেন।
টাকা পয়সার ক্ষেত্রে ও এই একি সুত্র কাজে লাগিয়ে টাকাকেও এভাবে বহু গুন বাড়িয়ে তোলা যায়। সেজন্য টাকাকে শুধু সেভিংস একাউন্টে জমিয়ে রাখলে চলবে না।
অনেকে ভাবেন ব্যাংকে রাকা রাখবেন ব্যাংক interest দেবে, সেই interest এই তো টাকা বেড়ে যাবে। শুধু শুধু মাথা ঘামিয়ে কী লাভ। হ্যা লাভটাই বোঝাবো এবার মন দিয়ে শুনুন।
আপনার একাউন্টে যখন প্রতিমাসে স্যালারি আসে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে বাকি টাকা একাউন্টেই ফেলে রাখেন। ভাবছেন ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন। টাকা তো বাড়ছে, কিন্তু সেটা কী সত্যিই বাড়ছে না কমছে।
ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট এ interest এর হার তিন থেকে চার পারছেন। আর ভারতের infraction rate 5%, সুতরাং আপনার টাকার মূল্য বছরে প্রায় ১% হারে কমছে। infraction বা মূল্য বৃদ্ধি মানে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে যাওয়া।
তাহলে টাকা বাড়াতে কী করবেন।
টাকা দিয়ে টাকা বানানোর উপায়, কীভাবে ইনভেস্ট করে ধনী হবেন।
টাকাকে শুধু শুধু সেভিংস একাউন্টে ফেলে রাখবেন না। টাকাকে ইনভেস্ট করুন / বিনিয়োগ করুন।
এবার কথা হলো ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ কোথায় করবেন।
ইনভেস্ট এর জন্য প্রথম চয়েস আসে ফিক্সড ডিপোজিট বা রেকারিং ডিপোজিট এগুলোর ইন্টারেস্ট রেট গড়ে ৬-৭% টর আসেপাশে থাকে। তাই এগুলোতে টাকা মাল্টিপ্লাই হওয়ার চান্স অনেক কম।
এরপর আসে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ( জমি বাড়ি বা প্রপার্টি কেনা বেচা)
এটারও রিটার্ন প্রায় ৫% এর কাছাকাছি। যা খুবি কম এছাড়াও এটাতে বিনিয়োগ করতে গেলে প্রপার্টি সমন্ধে নলেজ, মোটামোটি কয়েক লক্ষ্য বা কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। যা সাধারন মানুষের ক্ষেত্রে দুসাঃদ্য ব্যাপার।
সোনা এবং জুয়েলারি তে ইনভেস্টমেন্ট / বিনিয়োগ
গোল্ড বা জুয়েলারি, কিন্তু আপনারা এটার মার্কেট ভ্যালু বা গ্রাফ চেক করলেই বুঝতে পারবেন সবসময় এটার দাম অনেক বেশি উঠানামা করে। তাছাড়া এটা এফডিএ এর মতোই রির্টান দেয়। তাই এটাও অতোটা লাভজনক নয়।
সবশেষে পড়ে থাকে শেয়ার মার্কেট। যেখানে আপনি আপনার টাকাকে কয়েকগুন মাল্টিপ্লাই করতে পারবেন। কিন্ত শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করে প্রফিট করতে গেলে, আপনাকে যথেষ্ট এক্সপার্ট হতে হবে। আপনাকে ব্যবসা বুজতে হবে। কোন বিজনেস ভবিষ্যতে কেমন পারফর্ম করবে
সেটা সমন্ধে আইডিয়া থাকতে হবে তাহলেই আপনি শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করে লাভ করতে পারবেন। কিন্তু এই ব্যাস্ত জীবনে অত সব শেখার সময় কোথায়।
তাই সবশেষে চলে আসে মিউচুয়াল ফান্ড, এটাও একটা শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট মেন্ট। AMC অথাৎ Asset Management company হলো সেই সমস্ত কোম্পানি যারা মিউচুয়াল ফান্ড তৈরি করে। এই মিউচুয়াল ফান্ড আপনার আমার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেগুলোকে নানান কোম্পানিতে ইনভেস্ট করে। এবং সেটার থেকে যে প্রফিট আসে সেটা সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়। নিজেদের এক দুই পারছেন্ট ব্রোকারেজ চার্জ রেখে।
এই ইনভেস্ট করার জন্য প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ডের এক বা একাধিক ফান্ড ম্যানেজার থাকে। যারা শেয়ার মার্কেট সমন্ধে হাইলি অভিজ্ঞতা সম্পন্য। যারা আপনার টাকাকে সঠিক জায়গায় ইনভেস্ট করে দেয়।
ইনভেস্টমেন্ট এর গোল্ডেন রুল হলো ডাইভারসিফিকেশন। অথাৎ কখনও সব টাকা একজায়গায় ইনভেস্ট না করা। যটা ফলো করে মিচুয়াল ফান্ড গুলো তৈরি।
আপনি মিউচুয়াল ফান্ডে ফান্ড ম্যানেজার এর সকল তথ্য দেখতে পাবেন। যেমন তার অভিজ্ঞতা, প্রোফাইল ইত্যাদি। এছাড়াও প্রত্যেক ফান্ডের ভালো ও খারাপ দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন।
মিচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করে আপনি সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটি পাবেন তা হলো আপনার ইনভেস্ট করা টাকা আপনি যখনি চাইবেন ফেরত নিতে পারবেন। যেটা রিয়েল এস্টেট এ একদমি পাবেন না।
Risk Factors
শেয়ার মার্কেট রিস্ক তো থাকবেই, সেইরকমি রিস্ক এরানোর উপায় ও রয়েছে।
প্রথমত ইনভেস্টমেন্ট সবসময় লং-টার্ম বা লম্বা সময়ের জন্য করা উচিত। সেটা কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বছরের কথা মাথায় রেখে। তাহলে এর মাঝে কোন এক সময় মার্কেট ডাউন হলেও লং-টার্ম এ আপনি ভাল অংকের প্রফিট এর মুখ দেখতে পারবেন।
ব্যবহারিক ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ ক্যালকুলেশন।
ধরেন আপনি প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে ইনভেস্ট করতে শুরু করলেন। এবার সারাজীবন তো আপনার ইনকাম সমান থাকবেনা সেটা আস্তে আস্তে বাড়বে।
সুতরাং আপনি বছরে ১০০০ টাকা করে ইনভেস্টমেন্ট বাড়িয়ে গেলেন। এবছর ৫০০০ তো পরের বছর ৬০০০ এভাবে পাঁচ বছর পর আপনার মোট ইনভেস্ট টাকার পরিমাণ হয় ৪ লক্ষ্য ২০ হাজার টাকা। এরা ডাবল হয়ে ৮ লক্ষ্য ৪০ হাজার কিংবা তারও বেশি হতে পারে।
Post a Comment
0Comments